অনেক বিশেষ ব্যক্তিবর্গ দুর্নীতিতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন। জড়িতদের চিহ্নিত করে দুদক, বিচার বিভাগ, সরকারি-বেসরকারি এবং আদালতের পক্ষ থেকে সমন্বিতভাবে তাদের সতর্ক করে বার্তা দিতে হবে। যদিও এ কাজ কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ। একজন সৎ ব্যক্তি, একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির খপ্পরে পড়ে যেতে পারেন। কিন্তু তারপরও দুর্নীতিমুক্ত জাতি ও সমাজ গঠনে এ কাজ শুরু করতে হবে।’
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দণ্ডিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতের ১৩ বছরের দণ্ড থেকে কমিয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট এসব কথা বলেছেন।রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, ‘সাংবিধানিক পদধারী বা নন-পদধারী; সে যেই হোক না কেন, দুর্নীতিতে জড়িত থাকলে, তাকে বিচারের আওতায় এনে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনার কারণেই দুর্নীতির মূলাৎপাটন করতে আমরা সাংবিধানিকভাবে বাধ্য।’
হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সইয়ের পর বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৬৬ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করা হয়।প্রকাশিত রায়ে হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ‘দুর্নীতি একটি মানসিক ব্যাধি। আমরা সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, দুদক এখন পর্যন্ত এ রকম হাজারও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনতে সক্ষম নয়। কিন্তু এর জন্য চেষ্টা থাকতে হবে। তবে দুর্ভাগ্য যে, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে দুদক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ওপর নির্ভর করে আছে।’
রায়ে হাজী সেলিমকে ৩০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত বছরের ৯ মার্চ অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন হাইকোর্ট। তবে তিন বছরের দণ্ড থেকে খালাস পান তিনি।দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘বিচারিক আদালত রায়ের কপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। ১০ বছরের কারাদণ্ড বহাল থাকায় হাজী সেলিম সংসদ সদস্য পদ হারাবেন।’
হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, ‘আমরা আপিল বিভাগে আবেদন করবো। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার জাতীয় সংসদের স্পিকারের।’এর আগে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে হাজী সেলিমের রায়ের অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। রায়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে বিচারিক আদালতের দেওয়া ১৩ বছরের কারাদণ্ড কমিয়ে ১০ বছর বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে তথ্য গোপনের অভিযোগে বিচারিক আদালতে তার যে তিন বছরের সাজা হয়েছিল, তা বাতিল করা হয়েছে।এদিকে, সংবিধান অনুযায়ী হাজী মোহাম্মদ সেলিমের এমপি পদ থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
গত বছরের ৯ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে বিচারকের সইয়ের পর তা বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশ করা হয়েছে।রায় প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আত্মসমর্পণ না করলে তার বিরুদ্ধে বিচারিক (নিম্ন) আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
আদালত ওইদিন তার রায়ে বলেছেন, বিচারিক আদালতে রায়ে দণ্ডিত হাজী মোহাম্মদ সেলিমের আপিল সংশোধন করে (আংশিক গ্রহণ ও আংশিক খারিজ) দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬ ধারা সংক্রান্ত আপিল গ্রহণ করা হলো। এই আইনের ২৭(১)-এ আপিলের অংশ খারিজ করা হলো।
২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে লালবাগ থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় ২০০৮ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। পাশাপাশি ২০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়।
২০০৯ সালের ২৫ অক্টোবর এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন হাজী সেলিম। ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট তার সাজা বাতিল করেন। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে দুদক।ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে হাইকোর্টে ওই আপিল (হাজী সেলিমের) পুনরায় শুনানি করতে বলা হয়।
২০২০ সালের ১১ নভেম্বর হাইকোর্ট বিচারিক আদালতে থাকা মামলার যাবতীয় নথি (এলসিআর) তলব করেন। এরপর কয়েক কার্যদিবস শুনানি শেষে ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিলটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখা হয়।মামলায় দুদকের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। হাজী সেলিমের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার ও আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান মনির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল তামান্না ফেরদৌস।