মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনির কয়েক দফা রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দুই বিচারক (ঢাকার দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট) হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ভবিষ্যতে রিমান্ড মঞ্জুরের ক্ষেত্রে তারা সতর্ক থাকবেন বলে অঙ্গীকারও করেছেন। এরপর শুনানি নিয়ে তাদের বিষয়ে আদেশ দিতে আগামী ২৫ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
দুই বিচারক হলেন- ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলাম। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে এ ক্ষমা চাওয়ার আবেদন করেন।পরীমনির রিমান্ড নিয়ে দুই বিচারক নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার পরে দুপুর তিনটার পরে হাইকোর্ট বেঞ্চে দুই ম্যাজিস্ট্রেটের আইনজীবী এর আগে দেওয়া লিখিত ব্যাখ্যা পড়ে শোনান। আদালত শুনানি নিয়ে আগামী ২৫ নভেম্বর এ বিষয়ে রায় ঘোষণার দিন ঠিক করেছেন। পাশাপাশি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
রোববার (৩১ অক্টোবর) নির্ধারিত দিনে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।আদালতে আজ দুই বিচারকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আবদুল আলীম মিয়া জুয়েল, তার সঙ্গে ছিলেন সুবির নন্দী দাস ও আব্দুল কাইয়ুম খান। পরীমনির পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হয়ে অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম ( জেড আই) খান পান্না, তাকে সহযোগিতা করেন সৈয়দা নাসরিন, অপর এক আবেদনকারী আইনজীবী মো. মজিবুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান।
ক্ষমা প্রার্থনাকারী বিচারক ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলামমের বিষয়ে তাদের আইনজীবী আবদুল আলীম মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, তদন্ত কর্মকর্তাও নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। ভবিষ্যতে রিমান্ড আবেদনের সময় সতর্ক থাকবেন বলে জানিয়েছেন।দেবব্রত বিশ্বাস দ্বিতীয় দফায় পরীমনির দুই দিন এবং আতিকুল ইসলাম তৃতীয় দফায় এক দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাজী গোলাম মোস্তাফা।
সময় চেয়ে করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর নায়িকা পরীমনির রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়ে ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দুই বিচারককে ৩১ অক্টোবর দিন ঠিক করে দেন হাইকোর্ট। তারই আলোকে নির্ধারিত দিনে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর বিষয়ে ঢাকার দুই মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চে আবেদন করেন। সেটি শুনানি নিয়ে রায়ের জন্যে এই আদেশ দেন আদালত।বিচারক দেবব্রত বিশ্বাস দ্বিতীয় দফায় দুদিন এবং বিচারক আতিকুল ইসলাম তৃতীয় দফায় পরীমনিকে একদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিলেন।
গত ৪ আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা হয়। এ মামলায় পরীমনিকে প্রথমে চারদিন, দ্বিতীয় দফায় দুদিন, তৃতীয় দফায় একদিনসহ মোট সাতদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিফল হয়ে জজ আদালতে জামিন চান পরীমনি। তবে জজ আদালত জামিন আবেদনের শুনানির তারিখ দেরিতে নির্ধারণ করায় হাইকোর্টে আবেদন করেন তিনি। হাইকোর্ট রুলও জারি করেন। পরে জজ আদালত পরীমনির জামিন আবেদনের ওপর শুনানির তারিখ এগিয়ে আনেন। ৩১ আগস্ট তাকে জামিন দেওয়া হয়। পরদিন পরীমনি কারামুক্ত হন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে এ বিষয়ে শুনানি হয়। ওইদিন তদন্ত কর্মকর্তার ব্যাখ্যা ‘সন্তোষজনক নয়’ উল্লেখ করে ২৪ অক্টোবরের মধ্যে তাদের আবারও আদালতে ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্যও ২৪ অক্টোবর দিন ধার্য রাখেন আদালত। তবে দুই বিচারকের পক্ষে সময় আবেদন করায় নির্ধারিত দিনে শুনানি না করে আদালত সময় মঞ্জুরের আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুই বিচারকের দাখিল করা লিখিত ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন বলে ওই দিনই জানিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে বিচারকদের লিখিত ব্যাখ্যা আগের দিন গত ১৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে জমা দেওয়া হয়। পরদিন হাইকোর্টে তাদের লিখিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়। এরপর আদালত আজ পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেছিলেন।
অন্যদিকে হাইকোর্টে পরীমনির আবেদনের শুনানিতে তাকে দফায় দফায় রিমান্ডে নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ওই দুই বিচারককে ব্যাখ্যা দিতে ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফাকে নিজের অবস্থান ও কারণ ব্যাখ্যা করতে ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় দুই বিচারকের ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তাও আদালতে উপস্থিত হন।
দফায় দফায় পরীমনির রিমান্ড মঞ্জুরের কারণ জানানোর পাশাপাশি পৃথক লিখিত ব্যাখ্যায় দুই ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকলে তা ‘অনিচ্ছাকৃত ও সরল বিশ্বাসে’ বলে উল্লেখ করেছেন। অনিচ্ছাকৃত ও সরল বিশ্বাসে করা ভুলত্রুটি মার্জনা করে পৃথক ব্যাখ্যা নিয়ে অধিকতর ব্যাখ্যার দায় থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আরজিও জানান দুই বিচারক।
তবে তখন হাইকোর্ট প্রথম দফায় তাদের দেওয়া ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হননি।