২০১৮ সালে শাহবাগ থানার মামলা নং ১২(৩)২০১৮ তে রিমান্ডে নিয়ে ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি জাকির হোসেন মিলনের মৃত্যুর ঘটনায় দুই ওসিসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছে পরিবার।
মিলনের চাচা বি এম অলি উল্লাহ আজ ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার আবেদন করেন।
বিচারক মো. আছাদুজ্জামান বাদীর আর্জি শুনে অধিকতর শুনানির জন্য আগামী ১৭ অক্টোবর দিন রেখেছেন।
২০১৩ সালের নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ১৫(২) ধারায় এই আবেদনটি করা হয়েছে।
মামলায় শাহবাগ থানার তখনকার ওসি মো. আবুল হাসান (বর্তমানে রমনা থানার ওসি), রমনা মডেল থানার তৎকালীন ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম, ওই সময়ে শাহবাগ থানার দায়িত্বরত উপপরিদর্শক (এসআই) সুজন কুমার রায়, এসআই সাইদুর রহমান মুন্সি, এসআই অমল কৃষ্ণ ও এসআই শাহরিয়ার রেজাকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া অজ্ঞাত পরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজন পুলিশ সদস্যকেও আসামি করার আবেদন করা হয়েছে মামলার আরজিতে। মামলার অভিযোগ করা হয়, ২০১৮ সালের ৬ মার্চ সকাল ১০টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার ও সাজার প্রতিবাদে জাকির হোসেন মিলন ও তার সহপাঠী আকরাম হোসেন ফরাজী জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করার জন্য রওনা হন। মানববন্ধন শেষে ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ মিছিলসহ মৎস ভবনের কাছে পৌঁছালে মিলন, আকরামকে আসামিরাসহ আরও সঙ্গীয় অন্যান্য অফিসার ও সদস্যরা মিলে আটক করে নির্যাতন করতে করতে রমনা মডেল থানায় নিয়ে যান। থানায় নিয়েও ওসিসহ অন্যরা তাদের নির্যাতন করেন। পরে তাদের শাহবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তাদের নির্যাতন করা হয়। পরে তাদেরকে শাহবাগ থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাদের গ্রেপ্তারের খবরে বি.এম. অলি উল্যাহ প্রথমে রমনা ও পরে শাহবাগ থানায় যান। থানার প্রহরীকে জিজ্ঞাসা করলে জানান, তার অবস্থান বলা যাবে না।
বাদী খোঁজাখুঁজি করেও মিলনকে না পেয়ে পরে জানতে পারেন ৭ মার্চ তাকে কোর্টে হাজির করা হয়েছে। ওই আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শুনানির দিন মিলন বাদীকে জানান, পুলিশ তাকে অমানুষিক নির্যাতন করেছে। পুলিশ তাকে ভ্যানে করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
মামলার আবেদনে আরও বলা হয়, ডিবি কার্যালয়, শাহবাগ ও রমনা মডেল থানায় খোঁজাখুঁজি করেও মিলনের সন্ধান পাননি বাদী। পরে জানতে পারেন মিলন শাহবাগ থানার হেফাজতেই আছে। বাদী আসামিদের শত অনুনয়-বিনয় করেও সাক্ষাৎ পাননি।
আবেদনে আরও বলা হয়, রিমান্ড শেষে ১১ মার্চ মৃতপ্রায় অবস্থায় মিলনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। কেরানীগঞ্জ কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে মিলনকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে একজন ফোন দিয়ে মিলনের মৃত্যুর খবর জানান বাদীকে। তিনি ঢামেকে গিয়ে দেখতে পান, মিলনের মরদেহ মর্গের সামনে পড়ে আছে। শরীরে অমানুষিক নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পান বাদী।
বিলম্বে মামলা করার বিষয়ে বাদী বি.এম. অলি উল্যাহ বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে ও বাদীর পক্ষ থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করতে গেলে বাদীকে পুলিশ তিন দিন অজ্ঞাত স্থানে আটকে রেখে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। মামলা করলে ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়।’
আসামিরা দীর্ঘদিন বাদী ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখানোর কারণে মামলা করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মানসিকভাবে সাহস সঞ্চয় করে পরিবারের সাথে পরামর্শ করে আদালতে মামলা করলেন বলে জানান বিএনপি নেতা বি.এম. অলি উল্যাহ।