গায়ক ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা আপস করেছেন তার সাবেক স্ত্রী ও অভিনেত্রী শাহ হুমায়রা সুবাহ। পারিবারিকভাবে ২০ লাখ টাকায় মীমাংসার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত ১০ লাখ টাকায় মামলা তুলে নিয়েছেন সুবাহ।
সোমবার (২৫ জুলাই) ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক আবেরা সুলতানা খানমের আদালতে উপস্থিত হয়ে এ তথ্য জানান অভিনেত্রী। এসময় ইলিয়াসও উপস্থিত ছিলেন। এরপর মামলাটির সাক্ষ্য ও যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ২৭ জুলাই দিন ধার্য করেন।
এ সময় সুবাহ বিচারককে জানান, আমরা পারিবারিকভাবে ১০ লাখ টাকায় মামলা মীমাংসা করেছি। টাকা আমি বুঝে পেয়েছি। এখন ইলিয়াসের বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই।
ইলিয়াস জানান, পারিবারিকভাবে আমাদের আপস হয়েছে। সুবাহ ২০ লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। তবে যে কোনোভাবে আমরা মীমাংসা করেছি। ১০ লাখ টাকা তাদের পরিবারে দিয়েছি।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ লিয়াকত আলী জানান, ১০ লাখ টাকার বিনিময় ইলিয়াস ও সুবাহর মামলা মীমাংসা হয়েছে। ২৭ জুলাই মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।
চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি ইলিয়াস হোসাইনের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা করেছিলেন সুবাহ।
আদালতে তিনি বলেন, আমাদের দুজনের মধ্যে ডিভোর্স হয়ে গেছে। আমি আর এ মামলা চালাতে চাই না। মামলা প্রত্যাহার করতে চাই। এরপর বিচারক আসামি ও বাদীর উপস্থিতির জন্য সোমবার (২৫ জুলাই) শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন।
এর আগে ১৯ জুন ইলিয়াসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক আবেরা সুলতানা খানম। এ মামলায় ইলিয়াসের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার জারি রয়েছে।
চলতি বছরের মার্চে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের উপ-পরিদর্শক মাসুমা আফ্রাদ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ১১ জনকে।
এদিকে মামলায় উচ্চ আদালতের ছয় সপ্তাহের জামিনে ছিলেন ইলিয়াস। আত্মসমর্পণ করে জামিন শুনানির দিন আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় গত ২২ মার্চ ইলিয়াসের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক জুলফিকার হায়াত।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, সুবাহ একজন অভিনয়শিল্পী এবং আসামি ইলিয়াস একজন কণ্ঠশিল্পী। পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্ক। পরে দুই পরিবারের ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর শরিয়া মোতাবেক বিয়ে হয়। বিয়ের সময় ইলিয়াসের চাহিদা অনুযায়ী যৌতুক হিসেবে ১২ লাখ টাকা দামের রোলেক্স ঘড়ি, ১ লাখ টাকার স্বর্ণের আংটি, গলার চেইনের জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং বিয়ের কাপড় বাবদ দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়। এরপরও সুবাহর কাছে ফ্ল্যাট কেনার জন্য ৫০ লাখ টাকা ও গাড়ির জন্য ৩০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন ইলিয়াস। এছাড়া সুবাহর মায়ের কাছে যৌতুক হিসেবে ইউটিউব চ্যানেল কেনার জন্য ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। তখনো ইলিয়াসকে আড়াই লাখ টাকা দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, সুবাহ জানতে পারেন ইলিয়াস একাধিক বিয়ে করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুবাহকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন তিনি। এরপর ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর ইলিয়াস যৌতুক হিসেবে আরও ৮০ লাখ টাকা দাবি করেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া চলছিল। এর জেরে ইলিয়াস কাচের গ্লাস ভেঙে তার ভাঙা অংশ দিয়ে সুবাহকে মারতে যান। তখন সুবাহ থামাতে গেলে তার বাম হাত জখম হয়। পরবর্তীতে ইলিয়াস বিষয়টি নিয়ে সুবাহর কাছে ক্ষমা চান এবং এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
পরের দিন ২৮ ডিসেম্বর ইলিয়াস আবার সুবাহর কাছে ৮০ লাখ টাকা দাবি করেন। এতে সুবাহ অস্বীকৃতি জানালে ইলিয়াস এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি, লাথি মারেন এবং চুলের মুঠি ধরে দেয়ালের সঙ্গে ঠুকে জখম করেন। অসুস্থ হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন সুবাহ। মেডিকেল সনদপত্রে সুবাহকে মারপিট করে সাধারণ জখম করার বিষয়টি প্রকাশ পায়।
তদন্তকালে ইলিয়াসের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী/২০০৩) এর ১১(গ) ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। মামলা চলাকালে ছয় সপ্তাহের জামিন পান ইলিয়াস।
